মণিপুরে দুই বছর ধরে চলা জাতিগত সহিংসতা ও সাম্প্রতিক রাজনৈতিক চাপের মুখে অবশেষে পদত্যাগ করেছেন রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং। নেতৃত্ব নিয়ে রাজ্য বিজেপির ভেতরে অসন্তোষ এবং কংগ্রেসের সম্ভাব্য অনাস্থা প্রস্তাবের মুখে তিনি এ সিদ্ধান্ত নেন। গত রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপাল অজয় কুমার ভল্লার কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন বীরেন সিং।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে জানা যায়, বিজেপি বিধায়কদের একাংশ নেতৃত্ব পরিবর্তনের পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় দলে টানাপোড়েন চলছিল। কনরাড সাংমার ন্যাশনাল পিপলস পার্টির সমর্থন প্রত্যাহারের পরও বিজেপির সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলেও, অনেক বিধায়ক দলীয় নির্দেশ উপেক্ষা করে আস্থাভোটে ভিন্ন অবস্থান নিতে পারেন বলে আশঙ্কা তৈরি হয়।
এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী রোববার সকালে দিল্লি গিয়ে বিজেপি সভাপতি জে পি নাড্ডা এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠক করেন। আলোচনার পরই তিনি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন।
বিজেপি সূত্র জানিয়েছে, অন্তত ১২ জন বিধায়ক নেতৃত্ব বদলের দাবি জোরালোভাবে তুলেছিলেন, আর ছয়জন বিধায়ক নিরপেক্ষ অবস্থানে ছিলেন। স্পিকার ও মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যেও মতানৈক্য ছিল বলে জানা গেছে। বিদ্রোহী বিধায়কদের একটি দল অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করে তাদের দাবি জানায়।
এদিকে, বীরেন সিংয়ের পদত্যাগকে ‘বিলম্বিত সিদ্ধান্ত’ বলে কটাক্ষ করেছে কংগ্রেস। রাহুল গান্ধী এক টুইটে বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ প্রমাণ করে, জনগণের চাপ, সুপ্রিম কোর্টের তদন্ত এবং কংগ্রেসের অনাস্থা প্রস্তাব তাকে সরতে বাধ্য করেছে।
তিনি আরও বলেন, প্রায় দুই বছর ধরে বীরেন সিং মণিপুরে বিভাজন সৃষ্টি করেছেন। সহিংসতা, প্রাণহানি ও ধ্বংসযজ্ঞ অব্যাহত থাকলেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাকে বহাল রাখেন।
কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলেন, আমরা কাল বিধানসভায় অনাস্থা প্রস্তাব আনতে যাচ্ছিলাম। পরিস্থিতি বুঝেই মুখ্যমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। আমরা ২০২৩ সালের মে মাস থেকে এই দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু এত দেরি হলো কেন? মণিপুরের মানুষ এখনো প্রধানমন্ত্রীর সফরের অপেক্ষায় রয়েছেন, যিনি এতদিন রাজ্যে আসার প্রয়োজন বোধ করেননি।
বীরেন সিংয়ের বিরুদ্ধে অন্যতম অভিযোগ ছিল, তিনি ২০২৩ সালের মে মাসে শুরু হওয়া সহিংসতায় ইন্ধন জুগিয়েছেন। কুকি সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তি সুপ্রিম কোর্টে অভিযোগ করেন, ফাঁস হওয়া কিছু অডিও রেকর্ডিংয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে সহিংসতা উসকে দিতে শোনা গেছে।
বেসরকারি ফরেনসিক প্রতিষ্ঠান ‘ট্রুথ ল্যাবস’ জানিয়েছে, ওই অডিও রেকর্ডিংয়ের ৯৩ শতাংশই বীরেন সিংয়ের কণ্ঠস্বরের সঙ্গে মিলে গেছে। সুপ্রিম কোর্ট এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় ফরেনসিক বিজ্ঞান গবেষণাগার (সিএফএসএল)-এর প্রতিবেদন চেয়েছে।
মণিপুর বিজেপির প্রধান এ শারদা দেবী বলেছেন, রাজ্যের সংহতি রক্ষা ও জনস্বার্থের কথা মাথায় রেখেই মুখ্যমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। ২০১৭ সাল থেকে তিনি নিরলস পরিশ্রম করে গেছেন।
নতুন মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন, তা এখনো নির্ধারিত হয়নি বলেও জানিয়েছেন শারদা দেবী।