হজ উপলক্ষ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে লাখ লাখ মুসলিম নারী-পুরুষ পবিত্র নগরী মক্কা উপস্থিত হন। লাখ লাখ মানুষের পুণ্যের এ মহাসম্মেলনে অনেক মানুষ মৃত্যুবরণ করেন।
হজ ও ওমরায় গমন করা হলো আল্লাহর নির্দেশ পালন করা। ধর্মপ্রাণ মুসলমান যখন পবিত্র নগরী মক্কা কিংবা মদিনায় অবস্থান করেন, তখন তারা হয়ে যান আল্লাহর মেহমান। আল্লাহর মেহমান থাকা অবস্থায় কারো মৃত্যু হলে নিশ্চিত সে মৃত্যু কল্যাণের। এ মৃত্যুবরণ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুসংবাদ দিয়েছেন।
হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে এক সফরে ছিলাম। সে সময় ইহরাম অবস্থায় এক ব্যক্তি হঠাৎ উটের পিঠ থেকে পড়ে গিয়ে ঘাড় ভেঙে মারা যায়। ফলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তোমরা সিদ্ধ পানিতে কুল গাছের পাতা দিয়ে তাকে গোসল দাও এবং তার ইহরামের কাপড় ২টি দিয়ে কাফন দাও। তবে তার শরীরে সুগন্ধি লাগাবে না এবং তার মাথা ঢাকবে না। কেননা কেয়ামতের দিন তাকে (ইহরামকারী মৃতব্যক্তিকে) তালবিয়া পাঠরত অবস্থায় উঠানো হবে’। (বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি ও ইবনে মাজাহ)
হজের সফরে মৃত ব্যক্তির জন্য দুঃখ নয়; বরং এটা তার জন্য মহা খুশির সংবাদ। কারণ হজের সফরের মৃত ব্যক্তিকে ইহরামের পোশাকেই দাফন করা হবে। আর কেয়ামতের দিন ইহরামের পোশাকেই তালবিয়া পাঠ করতে করতে সে হাজির হবে।
উল্লেখ্য যে, প্রতি বছরই হজের সময় সৌদি আরবের মক্কা বা মদিনায় অবস্থানকালে অনেক হজযাত্রী মারা যায়। নিয়ম অনুযায়ী হজ করতে যাওয়া কোনো হজযাত্রী মারা গেলে তার লাশ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয় না। আর এ সংক্রান্ত একটি ঘোষণাপত্রে হজের প্রস্তুতির সময়ে প্রত্যেক হাজিকে সম্মতি দিতে হয়।
হজের সফরে যারা মক্কায় মারা যায় তাদেরকে কাবা শরিফের সন্নিকটে জান্নাতুল মাওলাতে দাফন করা হয়। আর যারা মদিনায় মারা যায় তাদেরকে মসজিদে নববী সংলগ্ন বাকিউল গারকাদে (জান্নাতুল বাকিতে) দাফন করা হয়।
এসব কবরস্থানে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সন্তান, স্ত্রীসহ অসংখ্য সাহাবায়ে কেরামের দাফন রয়েছে। হজ পালনকারীদের কেউ মারা গেলে তাদের দাফন এসব গোরস্থানে হওয়াও সৌভাগ্যের। আর হাদিসের সুসংবাদ তো রয়েছে।
হজ কেবল সামর্থ্যবানদের ওপর ফরজ করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনুল কারিমে ইরশাদ হচ্ছে, ‘আর প্রত্যেক সামর্থ্যবান মানুষের ওপর আল্লাহর জন্য বায়তুল্লাহর হজ করা ফরজ’। (সূরা: আলে ইমরান, আয়াত: ৯৭)
শারীরিক ও আর্থিকভাবে সক্ষম এবং সফরকারীর অনুপস্থিতিতে তার পরিবার নিজেদের ভরণপোষণ করতে সক্ষম হলে সব প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমানদের জীবনে অন্তত একবার করা ফরজ। মোট কথা যথাযথ সামর্থ্য থাকলে দেরি না করে দ্রুত হজ পালন করে ফেলা উচিত।
মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিঃসন্দেহে সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের জন্যে নির্ধারিত হয়েছে, সেটাই হচ্ছে এ ঘর, যা মক্কায় অবস্থিত এবং সারা জাহানের মানুষের জন্য হেদায়েত ও বরকতময়’। (সূরা: আলে ইমরান, আয়াত: ৯৬)
পরবর্তী আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘এতে রয়েছে মাকামে ইব্রাহিমের মতো প্রকৃষ্ট নিদর্শন। আর যে, লোক এর ভেতরে প্রবেশ করেছে, সে নিরাপত্তা লাভ করেছে। আর এ ঘরের হজ করা হলো মানুষের উপর আল্লাহর প্রাপ্য; যে লোকের সামর্থ রয়েছে এ পর্যন্ত পৌছার। আর যে লোক তা মানে না। আল্লাহ সারা বিশ্বের কোনো কিছুরই পরোয়া করেন না’। (সূরা: আলে ইমরান, আয়াত: ৯৭)