হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘কোরবানির দিন কোরবানির চেয়ে উত্তম আমল নেই। কেয়ামতের দিন কোরবানির পশুকে শিং, পশম ও খুরসহ পেশ করা হবে এবং কোরবানির জন্তুর রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই আল্লাহ তাআলার কাছে তা কবুল হয়ে যায়। তাই তোমরা খুব আনন্দ চিত্তে কোরবানি কর’।
১০ জিলহজ ফজর থেকে ১২ জিলহজ সন্ধ্যা পর্যন্ত সময়ে যেসব প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্ক, মুকিম ব্যক্তির কাছে নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে অর্থাৎ স্বীয় হাজাতে আসলিয়্যাহ (পানাহার, বাসস্থান, উপার্জনের উপকরণ ইত্যাদি) ছাড়া অতিরিক্ত এ পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়, যা সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্যের মূল্যের সমপরিমাণ (টাকার অঙ্কে আনুমানিক ৫৫ হাজার টাকা) হয়, সে ব্যক্তির ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব।
সামর্থ্যবানদের জন্য কোরবানি আবশ্যিক ইবাদত। এটি আল্লাহ তাআলা সন্তুষ্টি অর্জনের অনন্য মাধ্যম। কোরবানি বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য রয়েছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ শর্ত।
চলুন তাহলে জেনে নিই কোরবানি বিশুদ্ধ হওয়ার সেইসব গুরুত্বপূর্ণ শর্তগুলো-
(১) কোরবানির উপযুক্ত পশু হওয়া: কোরবানির পশু যেন সেই শ্রেণি বা বয়সের হয় যে শ্রেণি ও বয়স ইসলামি শরীয়ত নির্ধারিত করেছে। আর নির্ধারিত শ্রেণির পশু চারটি- উঁট, গরু, ভেঁড়া ও ছাগল। অধিকাংশ ওলামাদের মতে সবচেয়ে উৎকৃষ্ট কোরবানি হল উঁট, এরপর গরু/মহিষ, তারপর মেষ (ভেঁড়া), তারপর ছাগল। আবার নর মেষ মাদা মেষ থেকে উত্তম।
(২) পশুর নির্ধারিত বয়স হওয়া: পশুর শরিয়ত নির্ধারিত বয়স হওয়া। আর তা হচ্ছে-
> উট: উঁটের বয়স পাঁচ বছর সম্পূর্ণ হওয়া,
> গরু: গরুর বয়স দুই বছর সম্পূর্ণ হওয়া,
> ছাগল: ছাগলের বয়স এক বছর সম্পূর্ণ হওয়া,
> মেষ বা দুম্বা: মেষ বা দুম্বার বয়স ছয় মাস পূর্ণ হওয়া।
এর কম বয়সের পশু হলে তা কোরবানির জন্য যথেষ্ট হবে না। দলিল হিসেবে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এক হাদিসে এসেছে, لَا تَذْبَحُوا إِلَّا مُسِنَّةً إِلَّا أَنْ يَعْسُرَ عَلَيْكُمْ فَتَذْبَحُوا جَذَعَةً مِنْ الضَّأْنِ
অর্থ: ‘তোমরা দাঁতা পশু ছাড়া অন্য কোনো পশু (কোরবানিতে) জবাই করবে না। তবে যদি তোমাদের জন্য কষ্টকর হয়ে পড়ে তাহলে দুম্বা বা মেষের জাযআ (যার বয়স ছয় মাস) জবাই করবে’। (মুসলিম ১৯৬৩)
(৩) পশুতে শরিক সংখ্যা নির্ধারিত হওয়া: একটি উঁট অথবা গরুতে ৭ ব্যক্তি কোরবানির জন্য শরিক হতে পারে। (মুসলিম ১৩১৮) অন্য এক বর্ণনা মতে উঁট কোরবানিতে দশ ব্যক্তি শরিক হতে পারে। ইমাম শাওকানি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, হজের কোরবানিতে ১০ এবং সাধারণ কোরবানিতে ৭ ব্যক্তি শরিক হওয়াটাই সঠিক। (নাইলুল আওত্বার ৮/১২৬)
কিন্তু মেষ বা ছাগলে ভাগাভাগি বৈধ নয়। বলা বাহুল্য, একটি পরিবারের তরফ থেকে এক বা দুই ভাগ গরু কোরবানি দেওয়ার চেয়ে ১টি ছাগল বা ভেঁড়া কোরবানি দেওয়াটাই অধিক উত্তম।
(৪) পশু ত্রুটিসমূহ মুক্ত হওয়া। যেমন-
> এক চোখে স্পষ্ট অন্ধত্ব।
> স্পষ্ট ব্যাধি।
> স্পষ্ট খঞ্জতা।
> অন্তিম বার্ধক্য।
এ ব্যাপারে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘চার রকমের পশু কোরবানি বৈধ বা সিদ্ধ হবে না; (এক চোখে) স্পষ্ট অন্ধত্বে অন্ধ, স্পষ্ট রোগা, স্পষ্ট খঞ্জতায় খঞ্জ এবং দুরারোগ্য ভগ্নপদ’। (আবু দাউদ, তিরমিজি, নাসাঈ)
অতত্রব, এই চারের কোনো একটি ত্রুটিযুক্ত পশু দ্বারা কোরবানি সিদ্ধ হয় না। হজরত ইবনে কুদামাহ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ‘এ বিষয়ে কোনো মতভেদ আমরা জানি না’। (মুগনী ১৩/৩৬৯)