ভারতের হঠাৎ চালানো ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে পাকিস্তানের আজাদ কাশ্মীরসহ একাধিক এলাকার ধর্মীয় ও বেসামরিক স্থাপনা। তবুও ভীত নন স্থানীয় মানুষ। হামলায় ধ্বংসপ্রাপ্ত মসজিদে দাড়িয়ে ফজরের নামাজ আদায় করেছেন পাকিস্তানে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা।
দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন জানায়, গত মঙ্গলবার (৬ মে) দিবাগত রাতেই পাকিস্তানের অন্তত ৯টি স্থানে একযোগে এই হামলা চালায় ভারত। সবচেয়ে ভয়াবহ হামলাটি হয়েছে পাঞ্জাবের বাহাওয়ালপুর জেলার আহমেদপুর শারকিয়ায়, যেখানে একটি মসজিদে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাতে প্রাণ হারান অন্তত পাঁচজন, যাদের মধ্যে একজন শিশু ছিল। এছাড়া মুজাফফরাবাদ, কোটলি, বাঘ ও মুরিদকেতেও প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে।
তবে হামলার ভয়াবহতা সত্ত্বেও মনোবল হারায়নি স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। মারকাজে ধ্বংসপ্রাপ্ত মসজিদেই বৃহস্পতিবার ভোরে ফজরের নামাজ আদায় করেছেন শত শত মুসল্লি। পুলিশি বাধা ও বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থার মধ্যেও একত্রিত হন এলাকাবাসী।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, নামাজে বাধা দিতে গেলে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তির পরিস্থিতিও তৈরি হয়, তবে জনচাপের মুখে শেষ পর্যন্ত নতি স্বীকার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
স্থানীয় নেতা শেখ তামোইর জানান, ভারত থেকে ছোড়া চারটি ক্ষেপণাস্ত্র মাত্র আট মিনিটের ব্যবধানে মারকাজ তাইবা মসজিদ এবং আশপাশের এলাকায় আঘাত হানে। প্রথম বিস্ফোরণে ভূমিকম্পের মতো কেঁপে ওঠে চারপাশ। তবুও আমাদের সাহস ভাঙেনি।
মুজাফফরাবাদের বিলাল মসজিদেও হামলায় এক শিশু আহত হওয়ার খবর মিলেছে। হামলায় ক্ষিপ্ত হয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ কড়া প্রতিশোধের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ভারতের হামলায় ঝরানো প্রতিটি রক্তফোঁটার জবাব দেওয়া হবে। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিতে সেনাবাহিনীকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে ২২ এপ্রিল ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর থেকেই ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের অবনতি ঘটতে থাকে। পুলওয়ামার পর এটিই কাশ্মীরে সবচেয়ে বড় হামলা হিসেবে বিবেচিত। ভারতের অভিযোগ, এ হামলার পেছনে পাকিস্তানের মদদ রয়েছে, যা ইসলামাবাদ জোরালোভাবে অস্বীকার করেছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, দুই দেশ পরস্পরের সঙ্গে কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থগিত করেছে এবং গুরুত্বপূর্ণ চুক্তিগুলো বাতিল করেছে।
চলমান উত্তেজনায় অঞ্চলজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে যুদ্ধের শঙ্কা। তবুও সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের আস্থা ও দৃঢ়তা যেন আশার আলো দেখাচ্ছে। বোমা ধ্বংসের ভেতর থেকেও তারা ছড়িয়ে দিচ্ছেন শান্তি, প্রার্থনা আর একতার বার্তা।