জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) প্রশাসনিক ভবন বা ভিসি ভবন পুনঃনির্মাণের কাজ চলছে। মাত্র দুতলা এই ভবনে উঠতে নির্মাণ হচ্ছে লিফট। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার ৬ তলা ভবনেও কোনো লিফট নেই, কাফেটেরিয়াতে খাবার পানির পর্যাপ্ত ফিলটারও নেই।
রোববার (২০ এপ্রিল) নির্মাণাধীন ভিসি ভবনে লিফট লাগানোর কাজ শুরু হতে দেখা যায়।
জানা গেছে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় নেই ছাত্রদের জন্য কোনো আবাসন ব্যবস্থা। সেই সঙ্গে বেশিরভাগ ক্লাসরুমগুলোও বেশ পুরোনো যা মেরামত হয় না দীর্ঘদিন যাবৎ। অধিকাংশ ভবনে বিদ্যুৎ সমস্যার পাশাপাশি নেই পর্যাপ্ত খাবার পানির ব্যবস্থা।
শিক্ষার্থীদের দাবি, যেখানে শিক্ষার্থীরা তাদের মৌলিক অধিকারগুলোই পাচ্ছে না সেখানে দুতলা ভবনে লিফট লাগানো শুধুই বিলাসিতা। অনেকের মতে লিফটের ফলে নষ্ট হবে ভিসি ভবনের সৌন্দর্য। শিক্ষার্থীরা পুরান ঢাকার জীর্ণ-শীর্ণ এলাকায় বিভিন্ন জায়গায় ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে মেসে থাকেন। যার মধ্যে বেশিরভাগ বিল্ডিংগুলোই থাকার অনুপযোগী। বেশিরভাগ মেসগুলোতেই নিয়মিত গ্যাস, পানি, বিদ্যুতের ঝামেলা লেগেই থাকে। এত এত সমস্যার মধ্যেও ভিসির অফিসে লিফট লাগানোকে ভালো চোখে দেখছেন না শিক্ষার্থীরা।
বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ জবি শাখার সহ-সভাপতি মনিরুজ্জামান মনির বলেন, “জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য দীর্ঘদিন ধরে আবাসনের তীব্র সংকট বিরাজমান। হাজারো শিক্ষার্থী প্রতিদিন নানা রকম ভোগান্তি ও অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে দিন অতিবাহিত করছে, শুধু একটি নিরাপদ ও উপযুক্ত আবাসনের অভাবে।”
তিনি আরো বলেন, “এই পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি মাত্র দুইতলা ভবনে লিফট স্থাপন করার সিদ্ধান্ত আমাদের জন্য অত্যন্ত হতাশাজনক ও অযৌক্তিক মনে হয়েছে। যখন শিক্ষার্থীদের ন্যূনতম চাহিদা পূরণই নিশ্চিত করা যায়নি, তখন এমন একটি অগ্রাধিকারহীন খরচ শুধু শিক্ষার্থীদের প্রতি প্রশাসনের উদাসীনতাকেই প্রকাশ করে না, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন করে।”
অর্থনীতি বিভাগের ১৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী রাকিব হাসান বলেন, “অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতায় জর্জরিত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে। পর্যাপ্ত ক্লাসরুম, হল ও শিক্ষাসামগ্রী (ল্যাব, সেমিনার ইত্যাদি) না থাকলেও প্রশাসনিক ভবনে লিফট বসানো হচ্ছে। এতে স্পষ্ট, শিক্ষার্থীদের চেয়ে সুবিধাভোগী মহলের চাহিদাকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষার পরিবেশ উপেক্ষা করে এ ধরনের সিদ্ধান্ত প্রশ্নবিদ্ধ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত শিক্ষার্থীদের মৌলিক চাহিদাগুলো আগে নিশ্চিত করা।”
এ বিষয় হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থা বিভাগের শিক্ষার্থী মিলন আহমেদ সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেন, “প্রতিবন্ধী রাজার ছেলেদের দ্বিতীয় তলায় উঠতেও লিফট লাগে। আর এদিকে শিক্ষার্থীরা দুপুরের ক্যান্টিনের খাবার তো পায়ই না পানির জন্য ১০ মিনিট লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।”
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘এটা আগেই বাজেট করা ছিল। এটার টাকা অন্য কোথাও লাগানো যাবে না। লিফট মূলত কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ আসেন তাদের জন্য। যেমন ইউজিসি চেয়ারম্যান এলেন, তাকে আমি আমার রুমে নিতে পারিনি।’