যুক্তরাষ্ট্রের নতুন অভিবাসন নীতির আওতায় চলতি বছর এখন পর্যন্ত ৩১ জন বাংলাদেশি নাগরিককে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এদের মধ্যে ৩০ জন পুরুষ এবং একজন নারী রয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করা এবং বিভিন্ন মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে তাদেরকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
ঢাকায় এসে পৌঁছানো এসব নাগরিকদের মধ্যে তিনজনকে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা সংস্থার সদস্যরা বিশেষ নিরাপত্তার মাধ্যমে দেশে পৌঁছে দেন। বাকিদের ফেরত পাঠানো হয় বাণিজ্যিক ও চার্টার্ড ফ্লাইটে। সর্বশেষ গত শনিবার একটি চার্টার্ড ফ্লাইটে পাঁচজন বাংলাদেশি নাগরিক ঢাকায় ফেরত আসেন।
ফেরত আসা নোয়াখালীর শাহাদাৎ হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, যুক্তরাষ্ট্র সরকার তাকে সম্মানের সঙ্গেই ফেরত পাঠিয়েছে। কোনো অবমাননাকর আচরণ করা হয়নি বলে তিনি উল্লেখ করেন। তার দাবি, তিনি রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছিলেন, তবে সেটি গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় তাকে দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে শুরু থেকেই বিষয়টি সম্মানজনকভাবে পরিচালনার জন্য কূটনৈতিক পর্যায়ে উদ্যোগ নেয়া হয়। পুলিশের বিশেষ শাখার এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাস এবং ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের সঙ্গে একাধিক পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে।
এসব আলোচনার ফলেই ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশি নাগরিকদের সঙ্গে হাতকড়া ব্যবহার কিংবা সামরিক বিমানে পাঠানোর মতো অপমানজনক উপায় এড়ানো সম্ভব হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সরকারি সংস্থা অবৈধভাবে অবস্থান করা বিদেশিদের তালিকা তৈরি করে সংশ্লিষ্ট দূতাবাসের মাধ্যমে সে তালিকা বাংলাদেশে পাঠায়। পরবর্তীতে পুলিশ ও ইমিগ্রেশন বিভাগের যৌথ যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে নাগরিকত্ব নিশ্চিত হওয়ার পরই তাদের ফেরত পাঠানো হয়।
এই পুরো প্রক্রিয়াটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে। অভিবাসন সংশ্লিষ্ট নানা জটিলতা এবং মানবিক দিক বিবেচনায় একাধিকবার বৈঠক করেছে সংশ্লিষ্ট সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলো।
ফেরত আসা ব্যক্তিদের পুনর্বাসন ও সহায়তা প্রদানে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাককে সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। সংস্থাটির একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ব্র্যাক বিদেশফেরত অভিবাসীদের বিমানবন্দরে সহায়তা প্রদান করে থাকে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত আসা বাংলাদেশিদের জন্যও তারা প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে প্রস্তুত রয়েছেন।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে অভিবাসন নীতিতে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের অভিবাসীদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর কাজ শুরু করে মার্কিন প্রশাসন, যা বর্তমানেও চালু রয়েছে।