Probashirkantho
ঢাকারবিবার , ৬ এপ্রিল ২০২৫
  1. অর্থনীতি
  2. আন্তর্জাতিক
  3. ইসলাম
  4. খেলাধুলা
  5. জাতীয়
  6. টপ নিউজ
  7. প্রবাস জীবন
  8. ফিচার
  9. বিনোদন
  10. রাজনীতি
  11. লাইফস্টাইল
  12. লিড নিউজ
  13. শিক্ষাঙ্গন
  14. সারাদেশ
  15. সাহিত্য
আজকের সর্বশেষ সবখবর

রোহিঙ্গা ফেরাতে সীমান্তের দু’পাশেই চ্যালেঞ্জ

অনলাইন ডেস্ক:
এপ্রিল ৬, ২০২৫ ৪:৩৫ অপরাহ্ণ
Link Copied!

রাখাইনের মংডুর নাড়িবিল এলাকায় পরিবারের সঙ্গে ছিলেন মো. আজিজুর। ২০১৭ সালে ১৬ বছর বয়সে আজিজুরের হৃদয়ে যে ক্ষত তৈরি হয়েছে, তা আজও বয়ে চলেছেন তিনি। চোখের সামনে দাদা জহির আহমেদকে হত্যা করে মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী। এর পর পোড়া ভিটেমাটির স্মৃতিচিহ্ন রেখে মা-বাবা, ভাইবোনদের সঙ্গে মাইলের পর মাইল পাড়ি দিয়ে কক্সবাজারের টেকনাফের ক্যাম্পে আশ্রয় নেন। এখন তিনি জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশনের হয়ে ২৭ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শিশুদের পড়াশোনা শেখানোর কাজে যুক্ত। গতকাল শনিবার নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ভারী গলায় আজিজুরের উত্তর, ‘বাপদাদার ভিটায় কে যেতে না চায়।

জান্তা বাহিনীর নির্যাতনে দেশ ছেড়েছি। রাখাইনে ফিরতে এখন আতঙ্ক আরাকান আর্মি। জান্তা হটিয়ে তারা রাখাইনের সব কিছুর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। প্রতিদিন রোহিঙ্গাদের ওপর চলছে আরাকান আর্মির নির্যাতন। নিরাপত্তা নিয়ে নিশ্চয়তা ও বাংলাদেশের ক্যাম্পে থাকা অবস্থায় মিয়ানমারের জাতীয় পরিচয়পত্র পেলে যে কোনো সময় ফিরতে প্রস্তুত আমরা।’

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে ১ লাখ ৮০ হাজার জন ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য উপযুক্ত বলে জানিয়েছে মিয়ানমার। আরও ৭০ হাজার জনের যাচাই-বাছাই চলমান। শুক্রবার ব্যাংককে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে বৈঠকের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো এমন তথ্য সামনে আসে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যু নানা জটিলতায় ঘুরপাক খাওয়ার মুহূর্তে এ খবরকে ‘আশার আলো’ হিসেবে দেখছেন কেউ কেউ। তবে রোহিঙ্গারা বলছেন, জান্তা সরকার এমন ঘোষণা দিলেও প্রত্যাবাসন নিয়ে এপারে-ওপারে আছে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ। ক্যাম্পে বসবাসরত লাখ লাখ রোহিঙ্গার  ভয় দূর করে তাদের মধ্যে আস্থা ফেরাতে হবে। নিরাপত্তার শঙ্কা দূর হলে ধীরে ধীরে মানসিকভাবে প্রস্তুত হবে তারা। রাখাইন এখন মূলত আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে।

সেখানে জান্তা সরকারের তেমন কোনো প্রভাব নেই বললেই চলে। তাই রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফেরাতে জান্তার পাশাপাশি আরকান আর্মিসহ বৈশ্বিকভাবে যারা তাদের ওপর প্রভাব রাখে, তাদের সমন্বিত তৎপরতা প্রয়োজন। রোহিঙ্গা ফেরাতে আরাকান আর্মির ‘সবুজ সংকেত’ লাগতে পারে। তাই জান্তার পাশাপাশি বাংলাদেশকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে।  ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে উপযুক্ত– এমন ঘোষণা জান্তা সরকার দিলেও রাখাইন রাজ্য এবং বাংলাদেশ-মিয়ানমারের ২৭১ কিলোমিটার সীমান্তরেখায় আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার কারণে পুরো প্রক্রিয়াটি সফল হওয়া সহজ নয়।

শুক্রবার ব্যাংককে প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা বিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর রহমানের সঙ্গে বৈঠকে বসেন মিয়ানমারের উপপ্রধানমন্ত্রী উ থান শিউ। তিনি দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করছেন। বৈঠকে তিনি বাংলাদেশের প্রতিনিধিকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০১৮-২০ সালে ৮ লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা মিয়ানমারকে দিয়েছিল বাংলাদেশ। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে নিবন্ধিত রোহিঙ্গা ১০ লাখের বেশি। নিবন্ধনের বাইরে রয়েছে আরও অন্তত ২ লাখ রোহিঙ্গা। নতুনভাবে এখনও রোহিঙ্গা ঢুকছে। অন্তত ৮০ হাজার রোহিঙ্গা গত কয়েক মাসে নানাভাবে বাংলাদেশে এসেছে। তাদের মধ্যে ৫৬ হাজার জনকে নিবন্ধনের আওতায় নেওয়া হয়। জান্তাবিরোধী থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের অংশ হলো আরাকান আর্মি। ২০২৩ সালের অক্টোবরে রাখাইনে ব্যাপক হামলা শুরু করে আরাকান আর্মি ও তাদের জোট। এতে পরিস্থিতি নতুন মোড় নেয়। হাজার হাজার রোহিঙ্গাকে ঘরবাড়ি ছাড়তে হয়। অনেকে বাংলাদেশে এসে ক্যাম্পে স্বজনের কাছে আশ্রয় নেন।

টেকনাফে দমদমিয়া ক্যাম্পে পরিবারসহ আছেন মোহাম্মদ আমির হোসেন (৫০)। মিয়ানমারে ফেরার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘ মধ্যস্থতা করলে ও  নিরাপত্তা দিলে কেন ফিরব না। আমাদের ঘরবাড়ি, সম্পত্তি ফেরত দিতে হবে। অন্যান্য জাতিগোষ্ঠী যেভাবে সম্মান নিয়ে মিয়ানমারে বসবাস করে, ফিরে গিয়ে নিজেদের ভিটায় সেই সম্মান পেতে চাই।’

কক্সবাজারের ক্যাম্পে আরেক রোহিঙ্গা জানান, গতকাল শনিবারও মংডুর মাঙালা এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক বের করে আনে আরাকান আর্মি। খোলা মাঠে নিয়ে রোদের মধ্যে তাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখে। প্রত্যেকের ঘর তল্লাশি করে দেখেছে, কোনো অস্ত্র বা আরসার সদস্য রয়েছে কিনা।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান সমকালকে বলেন, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর জন্য চারটি ট্রানজিট সেন্টার আমাদের রয়েছে। রোহিঙ্গারা মনে করে, যে জায়গা থেকে তাদের বাস্তুচ্যুত করা হয়েছে, তা ফেরত পাওয়ার অধিকার তাদের রয়েছে। ফিরে যাওয়ার আগে তারা নিরাপত্তার নিশ্চয়তা চায়। জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় প্রত্যাবাসন হলে রোহিঙ্গারা মনোবল ফিরে পাবে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম বলেন, রাখাইনে জান্তা সরকারের কোনো ঢাল-তলোয়ার নেই। এ অবস্থায় রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে জান্তার এমন ঘোষণায় আরাকান আর্মি কী প্রতিক্রিয়া দেখায়, সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। প্রত্যাবাসন এত সহজ হবে না। এদিকে জান্তার পক্ষ হয়ে রোহিঙ্গাদের অনেকে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে লড়াই করছে। তাই বিষয়গুলো বেশ জটিল। তবে জান্তা সরকার ও আরাকান আর্মি উভয়ের ওপর চীনের এক ধরনের প্রভাব রয়েছে।

জানা গেছে, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে দ্বিপক্ষীয়, বহুপক্ষীয় আলোচনা ও সমঝোতার উদ্যোগ একাধিকবার নেওয়া হয়েছে, যেগুলো আলোর মুখ দেখেনি। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ২০১৭ সালের নভেম্বরে অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন বেসামরিক সরকার বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে একটি চুক্তি করেছিল। সেটির মধ্যস্থতা করেছিল চীন। ওই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ২০১৮ সালের ১৫ নভেম্বরের মধ্যে রোহিঙ্গাদের প্রথম দলটিকে মিয়ানমারে নিয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও তা কার্যকর হয়নি।  ২০১৯ সালের আগস্টে চীনের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর আরেকটি উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু নাগরিকত্বের বিষয়টি সুরাহা না হওয়ায় রোহিঙ্গারা যেতে চায়নি।

এর পর ২০২৩ সালের মার্চে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে তালিকা যাচাই-বাছাই করতে মিয়ানমারের একটি প্রতিনিধি দল কক্সবাজারে আসে। ১৮ এপ্রিল চীনের মধ্যস্থতায় সে দেশের কুনমিংয়ে বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও চীনের ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হয়। এর অংশ হিসেবে রোহিঙ্গাদের ২০ জনের একটি প্রতিনিধি দলকে মিয়ানমারে পরিদর্শনে নেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।  রাখাইনে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের জন্য মিয়ানমার সরকার যে অবকাঠামো তৈরি করছে, সেগুলো পরিদর্শন করা হয়। তবে টেকনাফে ফিরে এসে সেখানকার পরিস্থিতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে তারা। এতে ভেস্তে যায় প্রত্যাবাসনের সেই উদ্যোগ।

প্রেস সচিবের ফেসবুক পোস্ট  
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, আগামী বছরের মধ্যে রোহিঙ্গাদের তাদের মাতৃভূমিতে ফেরত পাঠাতে পারব কিনা তা নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। শনিবার ফেসবুকে এক পোস্টে তিনি আরও বলেন, বিশেষ করে রাখাইনে আরাকান আর্মির (এএ) দখল প্রক্রিয়ার ফলে পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠেছে। তবে গত কয়েক দিনে যেটা দেখেছি, তা আমাদের নেতৃত্ব এবং শীর্ষ পর্যায়ের কূটনীতিকদের এক সাহসী ও দৃঢ় অবস্থান। মিয়ানমার জান্তা কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা দিয়েছে। এখন দরকার টানা কূটনৈতিক চাপ বজায় রাখা, যাতে তারা রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায়, পূর্ণ মর্যাদা ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তার সঙ্গে ফিরিয়ে নেয়।