দারুল উলূম দেওবন্দের মূলনীতি, যা উসূলে হাশতেগানা নামে অভিহিত, তা-ই দারুল উলূম হাটহাজারীর মূলনীতি হিসেবে গৃহীত। যথা-
(১) মাদ্রাসার শিক্ষক কর্মচারীগণ সর্বদাই সাধ্যানুযায়ী অধিকতর জনসাধারণের মুক্তহস্তের দান সংগ্রহের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখবেন। এতে অপরকেও উৎসাহিত করবেন। দারুল উলূম হাটহাজারীর হিতাকাংখী ও শুভানুধ্যায়ীগণও এ কথা সর্বদাই স্মরণ রাখবেন।
(২) ছাত্রভর্তি ও ছাত্রদের খাদ্য যোগানের ব্যাপারে মাদ্রাসার শুভাকাংখীগণ সব সময় চেষ্টা করবেন।
(৩) পরামর্শদাতাগণ সর্বদা মাদ্রাসার উন্নতি, অগ্রগতি ও স্থায়িত্বের প্রতি সজাগ দৃষ্টি দিবেন এবং মাদ্রাসার উদ্দেশ্য, লক্ষ্য বাস্তবায়নে সঠিক পরামর্শদান ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন এবং সম্মিলিত সিদ্ধান্ত গ্রহণে নিজ মতামতের পরিপন্থী হলেও সম্মতি দেবেন। যদি স্বীয় মতামতের বিপক্ষে হওয়ার দরুণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিরোধিতা করা হয়, তবে মাদ্রাসার অস্তিত্ব বিপন্ন হবে। মুহ্তামিম সাহেব মাদ্রাসার ভিতরের বা বাইরের পরামর্শদাতাগণের নিকট থেকে পরামর্শ গ্রহণ করবেন। কোন কারণে সবার পরামর্শ গ্রহণে অপারগ হয়ে মাত্র কয়েকজনের পরামর্শ গ্রহণে বাধ্য হলে মুহ্তামিম সাহেবের উপর অন্য পরামর্শদাতাগণের অসন্তুষ্ট না হওয়া বাঞ্ছনীয়।
(৪) শিক্ষকমন্ডলী পরস্পর একতাবদ্ধ থাকা অত্যন্ত জরুরী। একে অপরকে হেয় প্রতিপন্ন না করা এবং অহংকারবোধ পরিহার করা উচিত। যখন অন্যকে হেয় করা হবে এবং অহংকারবোধ দেখা দেবে, তখন মাদ্রাসার সার্বিক উন্নতি ব্যাহত হবে।
(৫) ক্লাসের পূর্বনির্ধারিত পাঠ্য তালিকা দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকগণের জন্য নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করা অতীব জরুরী। যদি তা না করা হয়, তবে মাদ্রাসার লেখাপড়ার মানের উন্নতি হবে না। বাহ্যিক উন্নতি হলেও ফলপ্রসূ হবে না।
(৬) যতক্ষণ পর্যন্ত মাদ্রাসার কোন স্থায়ী আয়ের উৎস না থাকবে, ততক্ষণ আল্লাহর উপর নির্ভরশীল হয়ে চলবে। যদি মাদ্রাসার স্থায়ী আয় সুনির্দিষ্ট হয়ে যায়, অর্থাৎ দোকান, স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি, কারখানা, ব্যবসা ও কোন ব্যক্তি বিশেষের নিয়মিত দানের প্রতিশ্রুতি ইত্যাদি থাকে, তবে আল্লাহ্ তাআলার উপর নির্ভরশীলতা হ্রাস পাওয়ার আশংকা রয়েছে। এতে করে অদৃশ্য সাহায্য স্থগিত হয়ে যাওয়ার আশংকা এবং কর্মকর্তাদের মাঝে পারস্পরিক দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হতে পারে। মোটকথা আয়-ব্যয়ের ব্যাপারে বাহ্যিক সহায়-সম্বলের প্রতি একরকম অনাসক্তভাব থাকতে হবে এবং আল্লাহ তাআলার উপর পূর্ণ নির্ভরশীল থাকতে হবে।
(৭) উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মকর্তার প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ এবং ধনাঢ্য ব্যক্তিবর্গের প্রভাব দেখানো মাদ্রাসার জন্য ক্ষতির কারণ বলে গণ্য হবে।
(৮) শর্তহীন দানই হচ্ছে এ দ্বীনি প্রতিষ্ঠানের উন্নতি ও টিকে থাকার প্রধান সহায়।